আশঙ্কা গবেষকদের

১৮ শতাংশ উপকূলীয় এলাকা সাগরের পানিতে ডুবে যাবে

বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন জানিয়েছেন, চলতি শতকের শেষে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ থেকে ১৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ সাগরের পানিতে ডুবে যাবে। কেননা বিগত ৩০ বছরে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রতিবছর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হার প্রায় ৩ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ মিলিমিটার।

এর ফলে বাংলাদেশে ধান উৎপাদনের পরিমাণ ৫ দশমিক ৮ থেকে ৯ দশমিক ১ শতাংশ কমে যাবে বলেও তিনি জানান।

গতকাল রবিবার (১৮ জুন) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী এ সব তথ্য জানান। 

মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ঝুঁকি নিরূপণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে একটি গবেষণামূলক প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। ওই গবেষণায় প্রাপ্ত ফল হতে দেখা যায়, বিগত ৩০ বছরে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রতিবছর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হার প্রায় ৩ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ মিলিমিটার।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে খুব দ্রুত ও ব্যাপক পদক্ষেপ না নিলে আগামী দুই দশকের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিল্প-বিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ের পূর্বের তুলনায় ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে, যা ২১০০ সাল নাগাদ প্রায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে এন্টার্কটিকার বরফ গলার হারও বেড়ে গেছে বহুগুণে। ১৯৯০-এর দশকের তুলনায় এখন পৃথিবীর বরফ দ্রুত হারে গলছে।  

২০২১ সালে প্রকাশিত 'দা ক্রায়োস্ফিয়ার' জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন।  

তিনি বলেন, ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯০-এর দশক থেকে বিশ্বের মোট সামুদ্রিক বরফ, বরফখণ্ড ও হিমবাহের মধ্যে প্রায় ২৮ ট্রিলিয়ন মেট্রিক টন গলে গেছে। তিন দশক আগে যে হারে বরফ গলতো, বর্তমানে তা ৫৭ শতাংশ দ্রুত হারে গলছে।  

শাহাব উদ্দিন জানান, নাসার এক সাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিবছর গড়ে ১৫০ বিলিয়ন টন হারে এন্টার্কটিকার বরফ গলছে এবং প্রতিবছর গড়ে ২৭০ বিলিয়ন টন হারে গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এন্টার্কটিকা এবং গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলা পানি বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে এক তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ অবদান রাখছে।

এরপর জার্মানওয়াচের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য তুলে ধরেন মন্ত্রী। বলেন, ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম; যদিও গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণে বাংলাদেশের ভূমিকা অতি নগণ্য। মূলত শিল্পোন্নত এবং বড় বড় উন্নয়নশীল দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজেই, বিশ্বের বড় বড় দেশের কার্বন নিঃসরণ হ্রাসই এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার স্ব উদ্যোগে বিশদ পরিকল্পনা এবং কৌশল প্রণয়নের মাধ্যমে ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য অভিযোজন এবং প্রশমন পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করেছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //